ব্যায়ামের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাস পেটের মেদ দ্রুত কমাতে সাহায্য করে।
আমাদের অনেকের-ই দ্রুত মেদ কমানোর উপায় খুঁজি পত্র-পত্রিকায়। মনে হয়, ইশ! যদি তাড়াতাড়ি মেদ কমাতে পারতাম, তাহলে কতই না ভালো হতো। দ্রুত মেদ কমানোর উপায় জানা থাকলে, শরীরের অতিরিক্ত মেদটুকু ঝরাতে পারলে ঐ শাড়িটা বা এই পোশাকে আরও ভালো লাগতো, নিজের কাছেও এবং অন্যের কাছেও। কথায় বলে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। তাহলে দ্রুত মেদ কমানোর উপায় নিশ্চয়ই আছে, তাই নয় কি? এই বিষয়টাই আজ আপনাদের জানাবো।
ফ্যাট বার্ন করার বিষয়টাকে দুটো শিরোনামে ভাগ করতে পারি। একটি হলো ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ, অপরটি খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা। এ দুটো যদি নিয়মিত করা যায়, তবেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।
ক) দ্রুত মেদ কমানোর উপায় –খাদ্যাভ্যাস
১. গরম পানিতে লেবু
সকালে এক কাপ ঘন কফি বা চা মন মেজাজ ভালো করে দেয় ঠিকই। কিন্তু যদি ওজন কমাতে চান তাহলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে গরম পানিতে লেবুর রস পান করুন।
লেবু ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা হজমে সাহায্য করে ও শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটা দ্রুত চর্বি কমাতে সহায়তা করে। গরম পানিতে লেবু খাওয়া বেশি কষ্টকর মনে হলে এতে এক চামচ মধু যোগ করতে পারেন।
২. গ্রিন টি
গ্রিন টি সম্পর্কে সবাই কম বেশি জানেন। অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে এর কোন জুড়ি নেই। মেটাবোলিজমের হার বাড়িয়ে বাড়তি মেদ জমতেও দেয় না।
৩. প্রতিদিন জিরা পানি পান
সকালে পানীয় হিসেবে জিরা পানি পান করুন। এটা হজমে সহায়তা করে, পেট ফোলাভাব কমায় ও পেটের মেদ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৪. আয়রন
আয়রন এর অভাব হলে অক্সিজেনের অভাব হয়। তখন মেটাবোলিজমের হারও কমে যায়। এজন্য আয়রন খাওয়া খুবই জরুরী। কচু শাকে ও কলায় প্রচুর আয়রন আছে। প্রয়োজনে আয়রন ট্যাবলেটও খাওয়া যেতে পারে।
৫. প্রোটিন সমৃদ্ধ নাস্তা
শরীরে শক্তি যোগাতে প্রোটিন ভূমিকা রাখে। নাস্তায় প্রোটিন খাওয়া পেশি গঠনের পাশাপাশি সারাদিন পেট ভরা অনুভূত হতে সহায়তা করে। ফলে বাড়তি ক্যালরি গ্রহণের ঝুঁকি কমে।
প্রোটিন রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও দেহে চর্বি সঞ্চয়কারী ইন্সুলিনের মাত্রা কমায়।
৬. পানি
পানি পান না করে তো বাঁচা যায় না, কিন্তু পানি যে ওজন-ও কমায়, এটা হয়তো অনেকেই জানি না। এখন দিনে আপনি যতটা পানি পান করেন তার চেয়ে যদি দেড় লিটার প্রতিদিন বেশি পান করেন, তবে বছরে ১৭,৪০০ অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করা সম্ভব।
৭. দুধ জাতীয় খাবার
দুধ এবং দইজাতীয় খাবার বেশি খেতে হবে। এতে যে ক্যালসিয়াম থাকে, তা ফ্যাট বার্ন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে চিনি এড়িয়ে চলুন।
৮. মাছ
বেশি করে মাছ খান, কারণ মাছ খাওয়ার দরুন লেপ্টিন নামক হরমোন এর লেভেল কমে যায়। লেপ্টিন হরমোন বেশি থাকলে মেদ বাড়ার প্রবণতা থাকে।
৯. পিনাট বাটার
অবাক হয়ে ভাবছেন, বাটার কেন খাবেন? ব্যাপারটা হলো এই বাটারে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে। আর এ কারণে আপনার মেটাবোলিজমের হার-ও বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছে করলে আপনি শুধু চিনাবাদাম-ও খেতে পারেন। ৩২০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম-ই প্রতিদিন যথেষ্ট।
১০. শস্য-জাতীয় খাবার
শস্য-জাতীয় খাবার আঁশ সমৃদ্ধ। এটা শরীর সুস্থ রাখার পাশাপাশি ক্ষুধাভাব কমাতে ও উচ্চ ক্যালরিবহুল খাবারের চাহিদা কমাতে সহায়তা করে। উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ শস্য ওজন কমায় এবং পেটের মেদ কমাতেও সহায়তা করে।
১১. মসলা
আদা স্থূলতার সমস্যা কমায় এবং প্রদাহনাশক উপাদান সমৃদ্ধ। ওজন কমাতে চাইলে খাবারে এই ধরনের মসলা যোগ করুন। এটা দেহের ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
১২. স্টার্চ
স্টার্চ জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। রিফাইন্ড ময়দা, সাদা চাল, আলু এগুলো এড়িয়ে চলুন। ব্রাউন আটা খেতে পারেন। কার্বোহাইড্রেট বাদ দেয়া যাবে না। কার্বোহাইড্রেট এর চাহিদা পূরণ করবেন শাকসবজি, ডাল, ব্রাউন আটা এগুলো থেকে।
খ) দ্রুত মেদ কমানোর উপায় – ব্যায়াম
১৩. দ্রুত হাঁটা
হাঁটার কথা তো সবসময়ই শোনা যায়। কিন্তু দ্রুত মেদ কমানোর উপায় যদি চিন্তা করেন তবে সেক্ষেত্রে হাঁটার কোন বিকল্প নেই। প্রথমেই ওয়ার্ম আপ করে নিয়ে ৫ মিনিট দ্রুত হাঁটুন, তারপর ৩০ সেকেন্ড এর বিরতি, এই ৩০ সেকেন্ড আস্তে আস্তে হাঁটুন। এভাবে কয়েকবার করতে হবে। প্রথম প্রথম ২০ মিনিট করুন, তারপর আস্তে আস্তে ৫০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা পর্যন্ত করতে পারেন। এই ব্যায়ামে ১ মাসে ১৩ পাউন্ড পর্যন্ত ওজন কমতে পারে।
১৪. পুশ আপ
এই ব্যায়ামটাও আমাদের খুব পরিচিত। উপুড় হয়ে দেহের ভার হাত আর পায়ের পাতার উপর দিয়ে, একবার নীচে নামুন, আরেকবার উপরে তুলুন। এতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে এক পা উপরে তুলে তিনবার করুন, পরবর্তী তিনবার অপর পা উপরে তুলে পুশ আপ করুন।
১৫. স্ট্যান্ডিং বার্ড ডগ ব্যায়াম
নাম দেখেই বুঝতে পারছেন, ব্যায়ামটা কেমন হবে। প্রথমে ডান পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়ান, তারপর বাম পা-টি ধীরে ধীরে বুকের কাছে তুলে আনুন। ২ সেকেন্ড পর বাম পা পেছন দিকে, আর দুই হাত উপরে তুলে ধরুন। এটা শেষ হলে বাম পায়ে ভর দিয়ে ডান পা দিয়ে ব্যায়ামটি করুন।
১৬. বারপি ব্যায়াম
দুই পা একসাথে রেখে দুই হাত মাথার উপরে তুলুন। তারপর ধীরে ধীরে হাত নামিয়ে মাটিতে রাখুন, দুই হাত দুই পায়ের দুই পাশে। এবার প্রথমে বাম পা পেছনে বর্ধিত করুন, তারপর বাম পা আগের অবস্থায় এনে ডান পা পেছনে বাড়ান। তারপর আবার দাঁড়িয়ে দুই হাত মাথার উপরে তুলুন। এভাবে কয়েকবার করুন।
১৭. সাইড প্লাঙ্ক ব্যায়াম
ডান হাত এবং ডান পায়ের কিনার এর উপর ভর দিয়ে আপনার দেহটি শুন্যে তুলে ধরুন, যেন কাঁধ, কোমর আর পা একই লাইনে থাকে। এবার বাম হাতটি উপরে তুলে ধরুন। কিছুক্ষণ পর পার্শ্ব বদল করে নিন।
গ) দ্রুত মেদ কমানোর উপায় – অন্যান্য
আরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে দ্রুত মেদ ঝরাতে আর বাড়তি মেদ না জমতে দিতে। যেমন-
১৮. আপনার মেটাবোলিজমের হার কম মনে হয় যদি, সেক্ষেত্রে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। আপনার থাইরয়েড গ্রন্থির পরীক্ষা করে নিশ্চিত হোন।
১৯. যতটা পারেন স্ট্রেস এড়িয়ে চলুন। স্ট্রেস কন্ডিশনে করটিসল হরমোন বাড়ে। ক্ষুধা বাড়ে, মেটাবোলিজমের হার কমে। তাহলে মেদ তো জমবেই। তাই সবসময় হাসিখুশি থাকুন, দরকার হলে ম্যাডিটেশন করতে পারেন।
২০. দৈনিক যে খাবারগুলো খাবেন, সেগুলো একবারে না খেয়ে বার বার করে অল্প অল্প করে গ্রহণ করুন। এতে করে আপনার ব্রেনকে ফাঁকি দেয়া হবে, তখন আপনার মেটাবোলিজমের হার-ও বাড়তেই থাকবে। একটি রুটিন করে নিয়ে তা ফলো করতে পারেন। যেমন-
সকাল ৮টা – নাস্তা
সকাল ১১টা – হালকা স্ন্যাকস
দুপুর ১টা – দুপুরের খাবার
বিকাল ৪টা – হালকা খাবার
রাত ৯টা – ডিনার
রাত ১০/১১টা – এক গ্লাস দুধ।
এভাবে আপনার রুটিন আপনার পছন্দ অনুজায়ী বানিয়ে নিতে পারেন। লক্ষ্য করুন, এই রুটিনে সকালের দিকে বেশি খাবারের তালিকা দেয়া হয়েছে। কেননা সারা রাত ঘুমের পর মেটাবোলিজমের হার খুবই কম থাকে।
২১. পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্ট্রেস হরমোন আর ইনসুলিন লেভেল বাড়ে। মেটাবোলিজমের হারও কমে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস করুন। এভাবেই আপনি খুব সহজে বাড়তি মেদ ঝরিয়ে ফেলতে পারবেন।
You must be logged in to post a comment.